১। খতিয়ান কী ?
যে কাগজে জমির সমস্ত বিবরণ/ পরিচয় থাকে তাকে খতিয়ান বলে।
২। সি এস ( CS) রেকর্ড/ খতিয়ান কী ?
সি এস হল Cadastral survey। আমাদের দেশে জেলা ভিত্তিক প্রথম যে নক্সা ও ভূমি রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় তাকে সি,এস রেকর্ড বলা হয়। যা ১৮৮৮ সাল থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে পরিচালিত হয়। যার খতিয়ানকে সি এস খতিয়ান বলে।
৩। এস এ (SA) রেকর্ড/ খতিয়ান কী ?
এস এ হল State Aquisition এর পূর্ণরূপ। ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর সরকার নতুন ভূমি মালিকের নামে ১৯৫৬-৬৬ সালের মধ্যে এস এ জরিপ করে। যার খতিয়ানকে এস এ খতিয়ান বলে।
৪। আর এস রেকর্ড/ খতিয়ান কী ?
আর এস হল Revisional Survey এর পূর্ণরূপ। মুলত এস এ জরিপের ভুল সংশোধন ও প্রকৃত মালিকের নামে তথ্য হালনাগাদ করবার লক্ষে সরকার আর এস জরিপ করেন। যার খতিয়ানকে আর এস খতিয়ান বলে। বর্তমানে দৌলতপুর উপজেলায় আর এস রেকর্ড চলমান আছে।
৫। নামজারী কী ?
নামজারির ইংরেজি Mutation। নামজারি শব্দটি মিউটেশন,নামপত্তন বা নামখারিজ নামে সমাজে বেশি পরিচিত। উত্তরাধিকার বা ক্রয় সূত্রে বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় কোন জমিতে কেউ নতুন মালিক হলে তার নাম খতিয়ানভূক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারী বলে। নিম্নে নামজারি খতিয়ানের নমুনা দেয়া হলো-
৬। কখন নামজারি করতে হয়?
ক। জমি ক্রয় করলে
খ। ওয়ারিশ হিসাবে জমি প্রাপ্ত হলে
গ। এককথায় জমি হাত বদল হলেই নামজারি করতে হবে।
৭। নামজারি না করলে কি হয়?
ক। একই জমি কেও একাধিকবার বিক্রি করতে পারে
খ। নামজারি না করলে নিজের নামে নতুন খতিয়ান তৈরি করা যায় না
গ। নিজের নামে হোল্ডিং থাকে না বিধায় ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করা যায় না।
৮। নামজারির সরল প্রক্রিয়া
৯। জমা খারিজ কী ?
জমা খারিজ অর্থ যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করা। প্রজার কোন জোতের কোন জমি হস্তান্তর বা বন্টনের কারনে মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমি নিয়ে নুতন জোত বা খতিয়ান খোলাকে জমা খারিজ বলা হয়।
১০। পর্চা কী ?
ভূমি জরিপকালে প্রস্তুতকৃত খসরা খতিয়ান যে অনুলিপি তসদিক বা সত্যায়নের পূর্বে ভূমি মালিকের নিকট বিলি করা হয় তাকে মাঠ পর্চা বলে। রাজস্ব অফিসার কর্তৃক পর্চা সত্যায়িত বা তসদিক হওয়ার পর আপত্তি এবং আপিল শোনানির শেষে খতিয়ান চুরান্তভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর ইহার অনুলিপিকে পর্চা বলা হয়।
১১। তফসিল কী ?
তফসিল অর্থ জমির পরিচিতিমূলক বিস্তারিত বিবরন। কোন জমির পরিচয় প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মৌজার নাম, খতিয়ান নং, দাগ নং, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমান ইত্যাদি তথ্য সমৃদ্ধ বিবরনকে তফসিল বলে।
১২। মৌজা কী ?
জরিপ কাজের সুবিধার জন্য একটি উপজেলাকে ছোট ছোট ভাগ করা হয় । এর প্রত্যেকটি ভাগকে মৌজা বলে।
১৩। জে,এল ,নং (Jurisdiction List)
প্রতিটি মৌজার একটি নাম ও নম্বর থাকে। এই নম্বরকে জে,এল নম্বর বলে।
১৪। খাজনা / ভূমি উন্নয়ন কর কী ?
বর্তমানে খাজনাকে ভূমি উন্নয়ন কর বা Land Development Tax (LD Tax) বলা হয়। জমি ব্যবহারের জন্য সরকারকে যে রাজস্ব প্রদান করা হয় তাকেই ভূমি উন্নয়ন কর বলে। বর্তমানে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর নেয়া হয়। ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের সরল প্রক্রিয়া নিম্নে দেয়া হলো-
১৫। হোল্ডিং কী?
একটি খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত সমূদয় ভূমিকে হোল্ডিং বা জোতজমা বলে। হোল্ডিং নম্বর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের রেজিস্ট্রারে থাকে।
১৬। ওয়াকফ কী ?
ইসলামি বিধান মোতাবেক মুসলিম ভূমি মালিক কর্তৃক ধর্মীয় ও সমাজ কল্যানমুলক প্রতিষ্ঠানের ব্যায় ভার বহন করার উদ্দেশ্যে কোন সম্পত্তি দান করাকে ওয়াকফ বলে।
১৭। মোতওয়াল্লী কী ?
ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান যিনি করেন তাকে মোতওয়াল্লী বলে। মোতওয়াল্লী ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিত ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন না।
১৮। ওয়রিশ কী ?
ওয়ারিশ অর্থ ধর্মীয় বিধানের আওতায় উত্তরাধিকারী। কোন ব্যক্তি উইল না করে মৃত্যুবরণ করলে আইনের বিধান অনুযায়ী তার স্ত্রী, সন্তান বা নিকট আত্নীয়দের মধ্যে যারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মালিক হন এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে ওয়ারিশ বলা হয়।
১৯। ফারায়েজ কী ?
ইসলামি বিধান মোতাবেক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়াকে ফারায়েজ বলে।
২০। খাস জমি কী ?
যে জমির মালিক সরকারের পক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয় তাকেই খাস জমি বলে। সরকারের পক্ষে খাস জমির দেখভাল করেন জেলা প্রশাসক। খাস জমির ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় না। খাস জমির খতিয়ান নম্বর সবসময় ১ হয়।
২১। বিনিময় সম্পত্তি কী?
১৯৪৭ সালে দেশভাগের ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মাঝে যে সম্পত্তি আদান-প্রদান হয় তাকেই বিনিময় সম্পত্তি বলে।
২২। অর্পিত সম্পত্তি কী?
১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধের ফলে যেসব নাগরিক ভারত চলে যায় তাদের সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি / Enemy property / হিন্দু সম্পত্তি বলা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর এই সম্পত্তির নামকরণ করা হয় অর্পিত সম্পত্তি। সরকারের পক্ষে এই জমির দেখভাল করেন জেলা প্রশাসক। অর্পিত সম্পত্তি ১ বছরের জন্য লিজ দেয়া হয়।
২৩। পরিত্যাক্ত সম্পত্তি
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরে যেসব সম্পত্তির প্রকৃত মালিক পাওয়া যায় না সেই সম্পত্তিকে পরিত্যাক্ত সম্পত্তি বলে।
২৪। কবুলিয়ত কী ?
সরকার কর্তৃক কৃষককে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহন করে খাজনা প্রদানের যে অংঙ্গিকার পত্র দেওয়া হয় তাকে কবুলিয়ত বলে।
২৫। দাগ নং কী ?
মৌজায় প্রত্যেক ভূমি মালিকের জমি আলাদাভাবে বা জমির শ্রেনী ভিত্তিক প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে সিমানা খুটি বা আইল দিয়ে স্বরজমিনে আলাদাভাবে প্রদর্শন করা হয়। মৌজা নক্সায় প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে ক্রমিক নম্বর দিয়ে জমি চিহ্নিত বা সনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রদত্ত্ব নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে।
২৬। ছুট দাগ কী ?
ভূমি জরিপের প্রাথমিক পর্যায়ে নক্সা প্রস্তুত বা সংশোধনের সময় নক্সার প্রত্যেকটি ভূ-খন্ডের ক্রমিক নাম্বার দেওয়ার সময় যে ক্রমিক নাম্বার ভূলক্রমে বাদ পরে যায় অথবা প্রাথমিক পর্যায়ের পরে দুটি ভূমি খন্ড একত্রিত হওয়ার কারনে যে ক্রমিক নাম্বার বাদ দিতে হয় তাকে ছুট দাগ বলা হয়।
২৭। চান্দিনা ভিটি কী ?
হাট বাজারের স্থায়ী বা অস্থায়ী দোকান অংশের অকৃষি প্রজা স্বত্ত্য এলাকাকে চান্দিনা ভিটি বলা হয়।
২৮। অগ্রক্রয়াধিকার কী ?
অগ্রক্রয়াধিকার অর্থ সম্পত্ত্বি ক্রয় করার ক্ষেত্রে আইনানুগভাবে অন্যান্য ক্রেতার তুলনায় অগ্রাধিকার প্রাপ্যতার বিধান। কোন কৃষি জমির মালিক বা অংশিদার কোন আগন্তুকের নিকট তার অংশ বা জমি বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করলে অন্য অংশিদার কর্তৃক দলিলে বর্নিত মূল্য সহ অতিরিক্ত ১০% অর্থ বিক্রি বা অবহিত হওয়ার ৪ মাসের মধ্যে আদালতে জমা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জমি ক্রয় করার আইনানুগ অধিকারকে অগ্রক্রয়াধিকার বলা হয়।
২৯। আমিন কী ?
ভূমি জরিপের মধ্যমে নক্সা ও খতিয়ান প্রস্তুত ও ভূমি জরিপ কাজে নিজুক্ত কর্মচারীকে আমিন বলা হত।
৩০। সিকস্তি কী ?
নদী ভাংঙ্গনে জমি পানিতে বিলিন হয়ে যাওয়াকে সিকস্তি বলা হয়। সিকস্তি জমি ৩০ বছরের মধ্যে স্বস্থানে পয়স্তি হলে সিকস্তি হওয়ার প্রাককালে যিনি ভূমি মালিক ছিলেন, তিনি বা তাহার উত্তরাধিকারগন উক্ত জমির মালিকানা শর্ত সাপেক্ষ্যে প্রাপ্য হবেন।
৩১। পয়স্তি কী ?
নদী গর্ভ থেকে পলি মাটির চর পড়ে জমির সৃষ্টি হওয়াকে পয়স্তি বলা হয়।
৩২। নাল জমি কী ?
সমতল ২ বা ৩ ফসলি আবাদি জমিকে নাল জমি বলা হয়।
৩৩। দেবোত্তর সম্পত্তি কী ?
হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির আয়োজন, ব্যাবস্থাপনা ও সু-সম্পন্ন করার ব্যয় ভার নির্বাহের লক্ষ্যে উৎসর্গকৃত ভূমিকে দেবোত্তর সম্পত্তি সম্পত্তি বলা হয়।
৩৪। দাখিলা কী ?
ভূমি মালিকের নিকট হতে ভূমি কর আদায় করে যে নির্দিষ্ট ফরমে (ফরম নং-১০৭৭) ভূমিকর আদায়ের প্রমানপত্র বা রশিদ দেওয়া হয় তাকে দাখিলা বলে।
৩৫। ডি,সি,আর কী ?
ভূমি কর ব্যতিত অন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করার পর যে নির্ধারিত ফরমে (ফরম নং-২২২) রশিদ দেওয়া হয় তাকে ডি,সি,আর বলে।
৩৬। দলিল কী ?
যে কোন লিখিত বিবরনি যা ভবিষ্যতে আদালতে স্বাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনযোগ্য তাকে দলিল বলা হয়। তবে রেজিষ্ট্রেশন আইনের বিধান মোতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করেন তাকে সাধারনভাবে দলিল বলে।
৩৭। কিস্তোয়ার কী ?
ভূমি জরিপকালে চতুর্ভূজ ও মোরব্বা প্রস্তুত করার পর সিকমি লাইনে চেইন চালিয়ে সঠিকভাবে খন্ড খন্ড ভূমির বাস্তব ভৌগলিক চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে নক্সা প্রস্তুতের পদ্ধতিকে কিস্তোয়ার বলে।
৩৮। খানাপুরি কী ?
জরিপের সময় মৌজা নক্সা প্রস্তুত করার পর খতিয়ান প্রস্তুতকালে খতিয়ান ফর্মের প্রত্যেকটি কলাম জরিপ কর্মচারী কর্তৃক পূরণ করার প্রক্রিয়াকে খানাপুরি বলে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS